মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণমাধ্যমের বিষয়গুলো আইনগতভাবে চলতে হবে। কেননা ইলেকট্রনিক মিডিয়াই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল রেখে সবকিছু একটি আইন মোতাবেক, নীতিমালা মোতাবেক এগিয়ে চলুক, সেটাই আমরা চাই। সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪’র ওপর ভিত্তি করে একটি সম্প্রচার কমিশন আইনও প্রণয়ন করা হবে।
নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতাও সাংবাদিকতা করতেন। সেই সুবাদে আমিও সাংবাদিক পরিবারের সদস্য। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ৮৮ পৃষ্টা পড়লেই তা জানতে পারবেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) আয়োজনে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ‘প্রতিনিধি সম্মেলন-২০১৮’-এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার পর অষ্টম ওয়েজবোর্ড করে দিয়েছি। নবম ওয়েজবোর্ড করার প্রক্রিয়াও চলছে। কাজেই আশা করি সেটাও করা হবে। তবে আপনারা জানেন, ওয়েজবোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা থাকেন। তারা সবসময়ই একটু কালক্ষেপণ করার চেষ্টা করেন। এটা আপনারা নিজেরাও ভালো করে বোঝেন। আমার এখানে কোনো ব্যাখ্যা দিতে হবে না।
নবম ওয়েজবোর্ডের ঘোষণা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে যে প্রতিবন্ধকতাটুকু, সেটা কিন্তু আমাদের করা না। সেটা আপনাদেরই সাংবাদিক মহলের করা। কাজেই কে এসব করছে সেটা আপনারাই দেখবেন। কিন্তু আমরা চাই এটা তাড়াতাড়ি কার্যকর হোক।
সরকার তথ্য অধিকার আইনের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত সাত বছরে সারা বাংলাদেশে নিবন্ধিত হওয়া সংবাদপত্রের সংখ্যা ৭শ’র বেশি। সংবাদপত্রকে ইতোমধ্যে সরকার ‘সেবা শিল্পখাত’ হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছে। এই ঘোষণা যেন কার্যকর হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার আশ্বাস দেন তিনি।
আইসিটি অ্যাক্ট নিয়ে সাংবাদিকদের ভয়ের কিছু নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আইন নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেন। এটি নিয়ে শঙ্কার কিছু নাই। গণমাধ্যম, গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা দিতেই এই আইন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর প্রচারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বেশ কিছু গণমাধ্যম যেন ধরেই নিয়েছে যে, নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করলেই পাঠক প্রিয়তা পাওয়া যায়। আমি তাদেরকে বলবো, সরকারের ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরেন। আমরা সরকারে আছি তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে পজেটিভ খবরের চেয়ে নেগেটিভ খবরই বেশি।
দেশে ভোট চুরি-ডাকাতির সংস্কৃতি সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সময়ে শুরু হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আজ কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলে। অথচ এই দলটিই দেশের গণতন্ত্রকে হরণ করেছে। ভোট চুরি-ডাকাতির সংস্কৃতির শুরু করেছিল। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অস্ত্রের জোরে ক্ষমতায় এসে দেশের গণতন্ত্রকে শেষ করে দিয়েছিল। জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। হ্যাঁ, না ভোট দিয়ে গণতন্ত্রের সঙ্গে তামাশা করেছে।
তিনি বলেন, যারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, তাদের মুখে সুষ্ঠু নির্বাচন-গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। তারা ভোট কারচুপি করে, ভুয়া ভোটার বানায় তারা আবার নির্বাচনী গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে। তারা যখন ভোটে পারে না, ষড়যন্ত্র খোঁজে। গণতন্ত্র যেন বজায় থাকে, সেটাই আমি চাই।
তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে কিছু সংবাদপত্র উল্টাপাল্টা লিখেছে তা প্রমাণ হয়নি। এখন তাদের এখন কী করা উচিত চিন্তা করেন। এটা কী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা? অভিযোগ তুললেও দুর্নীতির বিষয়টি বিশ্বব্যাংক প্রমাণ করতে পারিনি। কানাডার ফেডারেল আদালত দুর্নীতির বিষয়টি বানোয়াট বলে ঘোষণা দিয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, সেটিই এখন প্রমাণিত হয়েছে।
বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বিএফইউজের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ের সভাপতি আবু জাফর সূর্য প্রমুখ।